প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল কুমিল্লার রবিউল, মহসিন, জাকারিয়া, ফেনীর তবারক, কাঞ্চন, পরিমল আর নোয়াখালীর তাজুল, বারেক ও রেহানা। তারা পেশায় কেউ ব্যবসায়ী, কেউ কৃষক, কেউ শ্রমিক, কেউ গৃহিণী এবং কেউবা ছাত্র। উদ্দেশ্য একটিই নিজ দেশকে শত্রুমুক্ত করা, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা। এদের কোনো বেতন ভাতা ছিল না যুদ্ধের জন্য। তবুও এরা প্রাণ দিয়ে দেশের মর্যাদা রক্ষা করেছিল

আলভি একদিন টিভিতে একটি যুদ্ধের নাটক দেখছিল। নাটকের দৃশ্যে সে দেখতে পায়, একটি দেশে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সৈনিকদের সমন্বয়ে একটি বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনী যুদ্ধ পরিচালনা করে কয়েকটি সেক্টরে বিভক্ত হয়ে। তবে এই বাহিনীর সদস্যরা মাসিক বেতন-ভাতা ও সেনাবাহিনীর আইনশৃঙ্খলার আওতাধীন ছিল। এদের মতো আরও তিনটি বাহিনী অবিরত যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল

জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতা লাভের জন্য ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি সরকার গড়ে উঠে। এই সরকার ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। উত্ত সরকার ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলে। এই সরকারের পক্ষে বিশ্বের শান্তিকামী দেশগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানায়

উনিশ শতকে গণচীনে মাঞ্জু শাসকের অপশাসনের বিরুদ্ধে একদল তরুণ সোচ্চার হয়। তারা বক্সার বা আই-হো-টুয়ান নামে পরিচিত। তারা চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে ঐ শাসক শংকিত হন

তরুণ লেখক সালমান ফারসি একটি দেশের যুদ্ধ পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে তার এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন। দেশটির যুদ্ধকে সর্বদলীয় রূপ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দলের প্রধানদের নিয়ে সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয় এবং উপদেষ্টা কমিটির সভায়। অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া অন্যকোনো প্রকার রাজনৈতিক সমাধান গ্রহণযোগ্য হবে না

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গাল রেজিমেন্টে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন অলি আহমেদ। দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে ফরোয়ার্ড পোস্ট পাকিস্তানে থেকে তিনি একদিন পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তার নির্দেশে একদিন গর্জে উঠেছিল মেশিনগান, মর্টার, গ্রেনেড। সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য তাকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। অলি আহমেদের মতো সাহসী যোদ্ধাদের জন্য আমরা পেয়েছি সবুজের বুকে লাল পতাকা।

স্বপন কুমার আফ্রিকার একটি দেশে বসবাস করে। সে ঐ দেশটির মুক্তিযুদ্ধের সময়েও সেখানে অবস্থান করেছিল। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য নির্বাচনে জয়লাভকারী কিছু সদস্য দ্বারা একটি সরকার গঠন করা হয়েছিল সেখানে। সরকারের কাজ ছিল যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং দেশটির পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করা। যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য দেশটিকে তারা এগারটি অংশে বিভক্ত করে

একসময় কাকলীর দেশটি ছিল পরাধীন, দেশটির স্বাধীনতা। লাভের জন্য প্রাণ দিয়েছে লক্ষ লক্ষ দেশপ্রেমিক। শুধু তাই নয়, দেশটির পক্ষে বিদেশি শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন লাভের জন্য দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং অন্যান্য সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় দেশটির প্রতি অনেক দেশ ও সরকারই সমর্থন প্রদান করে

ফিরে দেখা ৭১-এ অমি রহমান পিয়াল তার এক প্রবন্ধে 'বুদ্ধিজীবী হত্যার রাজাকার আল বদর'-এ লিখেছেন, "আল বদর ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী। রাজাকারদের সঙ্গে আল বদরদের খানিকটা তফাত ছিল। রাজাকাররা সামগ্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা লুটপাট ও ধর্ষণ করেছে। অনেকে যুদ্ধকালীন দূরবস্থার কারণে বাধ্য হয়েও রাজাকার হয়েছে কিন্তু আল বদরের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। তারা ছিল হিংস্র ও নিষ্ঠুর। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল।"

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির জাতীয় জীবনে সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের পর এদিন অর্জিত হয় একটি গৌরবময় চূড়ান্ত বিজয়।